নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে (ডিএই) পুনর্বহালের জন্য প্রশাসনের একটি চক্রের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে কৃষিবিদ জিয়াউল ইসলাম আকাশের বিরুদ্ধে। প্রশাসনের একটি অংশের সহযোগিতায় তিনি ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় দপ্তরের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে যারা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসনের পক্ষে, তারা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জিয়াউল ইসলাম ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের ব্যানারে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (KIB) ঢাকা মহানগর নির্বাচনে সমাজ কল্যাণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান, কৃষিবিদ ডা. আজিজ নেতৃত্বাধীন প্যানেলে তিনি ছিলেন। আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এই কৃষিবিদ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ফেরার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি দপ্তরগুলোতে রাজনৈতিক সংযোগের মাধ্যমে পুনর্বহাল হওয়া নিয়ে আগে থেকেই সমালোচনা রয়েছে।
বিশেষ করে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় দক্ষতা ও যোগ্যতার বদলে রাজনৈতিক পরিচয় প্রধান্য পেলে প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে আওয়ামীপন্থী একটি চক্র দাপট দেখিয়ে আসছে।
কৃষিবিদ বনি আমিনের সময় বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল, যেখানে আওয়ামী আদর্শের বাইরে থাকা কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলি করা হতো। সেই সময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে নিজেদের লোক বসানোর জন্য প্রভাব খাটানো হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। এখন সেই একই প্রভাব কাজে লাগিয়ে জিয়াউল ইসলাম পুনর্বহালের চেষ্টা করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জিয়াউল ইসলামের ফেরার বিষয়ে প্রশাসনের ভেতর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি তার পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে স্বাভাবিক, আবার অনেকে বলছেন, এটি রাজনৈতিক সুবিধাভোগের উদাহরণ।
প্রশাসনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, খামারবাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে একই পদে থাকা কিছু কর্মকর্তা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লবিং চালিয়ে তাদের অবস্থান অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। তাদের মধ্যেই একটি অংশ জিয়াউল ইসলামের পুনর্বহালের জন্য কাজ করছে।
এ বিষয়ে জিয়াউল ইসলামের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনে পুনর্বহালের চেষ্টা হলে তা নীতিমালার পরিপন্থী হবে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, এবং আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলে পরবর্তী প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হবে।
সরকারি প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে প্রষাসনিক লবিংয়ের মাধ্যমে পুনর্বহালের এই প্রচেষ্টা কতটা গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকে মনে করছেন, দক্ষতার বদলে প্রশাসনিক সংযোগ যদি নিয়োগ বা পদায়নের মাপকাঠি হয়, তাহলে প্রশাসনের সার্বিক কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় এই ধরনের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে দেশের কৃষি ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
Leave a Reply