বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ট্রেজারার হিসেবে সেনা কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়ায় প্রতিবাদ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দানি জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা আগামীকাল দুপুর ১২টার মধ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেন। জুলাই বিল্পবের স্পিরিট ধারণ না করা এবং বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন করার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
দুর্নীতিগ্রস্থ ও বিতর্কিত সাবেক কর্ণেল আবু হেনা মোস্তফা কামাল ববির নবনিযুক্ত ট্রেজারার এবং ট্রেজারারের যোগদানে উপাচার্যের সহযোগিতা সার্বিক বিষয় এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। উক্ত মতবিনিময় সভায় উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে উপনিত হন শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলে করে উপাচার্যের পদত্যাগের আল্টিমেটামের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
নবনিযুক্ত ট্রেজারার অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল আবু হেনা মোস্তফা কামাল বুধবার সকালে যোগদান করতে আসবেন এমন সংবাদ জেনে সকাল ১০ টা থেকেই ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকরাও প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেন। দুর্নিগ্রস্থট্রেজারার নিয়োগের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদলিপি দিয়েছেন যেখানপ ২২জন শিক্ষক সম্মতি স্বাক্ষর করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও তার নিয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদলিপি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার নতুন কোষাধ্যক্ষ হিসেবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল আবু হেনা মোস্তফা কামাল খানকে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগের পর গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে যোগদান করতে আসলেও যোগদান না করেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন ট্রেজারার অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল আবু হেনা মোস্তফা কামাল। গতকাল রাতেই কয়েকজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিবাদ জানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমাজকর্ম বিভাগের এক শিক্ষক পোস্ট করেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারার হিসেবে সেনা কর্মকর্তাকে মেনে নেয়া হবে না।
প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের সাথে অংশ নিতে দেখা যায় কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক হাফিজ আশরাফুল হক, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদেকুর রহমান, লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিরাজিস সাদিক, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন এবং সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক মো. মোস্তাকিমসহ অন্যানো শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সহযোগিতায় নবনিযুক্ত ট্রেজারারের যোগদানের পূর্বেই নিয়মবহির্ভূতভাবে রাতে এক অফিস আদেশে অফিস, কর্মকর্তা এবং গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলছেন উপাচার্য নিজে কলিমুল্লাহর হাতকে শক্ত করতে এমন কর্মকাণ্ড করতেছেন। প্রজ্ঞাপন জারীকৃত কর্মকর্তা সহকারী রেজিস্ট্রার ড. মোছা. খান সানজিদা সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, আমাকে উপাচার্য রাত ১১ টায় ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক প্রজ্ঞাপন দিতে বাধ্য করেন। রেজিস্ট্রার বরিশালে উপস্থিত থাকলেও তাকে না করিয়ে আমাকে দিয়ে
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিরাজিস সাদিক বলেন, “খুবই দুঃখজনক যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পতিত স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের পক্ষের শক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে এবং তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনমতকে তোয়াক্কা না করে তারা বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থবিরতা তৈরি করেছে। উদ্বেগজনকভাবে এটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে বর্তমান প্রশাসন তাকে গভীর রাতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান সম্বলিত নির্দেশনা জারি করে তাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে অবহিত। এ বিষয়টি নিন্দনীয় বলে মনে করি বলে আমরা শিক্ষকরা স্ব-শরীরে আন্দোলনে শরীক হয়েছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে নবনিযুক্ত ট্রেজারার যোগদান না করেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন গতকাল রাতে। আজকে সকাল ৯টা থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সবাই তিনি যেন যোগদান করতে না পারেন সেজন্য অবস্থান নিয়েছেন। প্রক্টরও পদত্যাগ করেছেন আজকে। উপাচার্য গতকাল রাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে একজন সহকারী রেজিস্ট্রারকে দিয়ে শিক্ষক
সার্বিক বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানীর কাছে জানতে চাইলে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি কীভাবে স্বাভাবিক রাখা যায় সেই চেষ্টা করছি এবং সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় কাজের মাধ্যমে সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এই ঘটনায় বক্তব্যের জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সকালের ডাক/তারু/সোহো/ববি প্রতিনিধি
Leave a Reply