কাজী ফারজানা বেগম: দুর্নীতি, একনায়কতন্ত্র, ভিন্নমত তথা বিরোধীদের দমন, বিচার ব্যাবস্থায় হস্তক্ষেপ, দমন নিপীড়ণের জন্য আইন প্রণয়ন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে অযাচিত ব্যাবহার করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ, ব্যক্তিগত বাক স্বাধীনতা হরণ, মিডিয়াকে বশীভূত রাখা এই সবই সত্যিকারের গনতন্ত্রের জন্য বিরাট প্রতিবন্ধকতা। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যবশত, স্বাধীনতার এতকাল পরেও, আমাদের দেশের জনগণের কাছে সত্যিকারের গণতন্ত্র অধরাই থেকে গেল। মেকি গণতন্ত্রের নামে আসলে চলছে ক্ষমতা দখলের রঙ্গ খেলা। আর আমরা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ হচ্ছি বলির পাঠা। একটি স্বাধীন দেশে এ সমস্ত অন্যায় আর কতকাল ধরে আমাদের মেনে যেতে হবে। খাদিজাতুল কুবরার ঘটনার দিকে দৃষ্টিপাত করলে, এই পুরো ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে পড়বে।
খাদিজার বিরুদ্ধে ২০২০ সালের অক্টোবরে কলাবাগান এবং নিউমার্কেট থানায় “সরকার বিরোধী প্রচারণা এবং বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করার” অভিযোগ আনা হয়েছিল। দুইটি মামলা, যা এক সপ্তাহের ব্যবধানে দায়ের করা হয়েছিল, একই দাবি ছিল। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, খাদিজাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। এরপর থেকে তাকে কারাগারে রাখা হয়েছিল। মামলার তথ্য অনুযায়ী, খাদিজা প্রধানমন্ত্রী, বিশিষ্ট রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে মিথ্যা, প্রতারণামূলক ও মানহানিকর প্রচারণা চালিয়ে দেশের আইনি সরকারকে উৎখাত করার পরিকল্পনা করেছিলেন।
তার অ্যার্টনি অনুসারে, ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে অভিযোগ দায়ের করার সময় খাদিজার বয়স ছিল ১৭, তবে এটি প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে দায়ের করা হয়েছিল। খাদিজার কিডনি রোগ ছিল, কিন্তু ঢাকার একটি আদালত ধারাবাহিকভাবে তার জামিনের আবেদন নাকচ করে দেয়। কি জঘন্য আচরণ ? খাদিজার ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক অধিকার চিকিৎসা পাওয়ার ব্যাপারটিকে
সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে পক্ষপাতদুষ্ট সরকারি বিচারক। খাদিজার অ্যার্টনি ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, পুরো আদালতে যুক্তি দিয়েছিলেন যে তিনি তার ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করা ভিডিওগুলিতে দর্শকদের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য দায়ী নন। কিন্তু আদালত এই ব্যাপারটিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। খাদিজার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, শিক্ষা জীবন ও ক্যারিয়ার ধ্বংস করার অপপ্রয়াস আমরা কখনো মেনে নেবোনা সময় এসেছে দেশের সমস্ত সচেতন নাগরিকের একত্রীত হয়ে কঠিন প্রতিবাদ করার। ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট নামের বতর্মান সরকারের তৈরী করা আইনটি সম্পূর্ণ বেআইনি এবং নাগরিক অধিকার হরণকারী। অনতিবিলম্বে আইনটি বিলুপ্ত করা, সেই সাথে খাদিজাতুল কুবরার নিশত মুক্তি ও উপযুক্ত ক্ষতিপুরন দাবি করছি বর্তমান তথাকথিত নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারে কাছে।
Leave a Reply