ঢাকা কলেজে ছাত্রদলের ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দেওয়া হয়েছে গেল সোমবার। এতে অনেক ত্যাগী, অভিজ্ঞ ও নির্যাতিত, কারা নির্যাতিত নেতাকে অবমূল্যায়নের অভিযোগ উঠেছে। আবার অনেক নেতাকে ‘পুরস্কৃত’ করেছেন দলটি। বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে ‘ভূমিকা’ মূল্যায়ন করে এই পদায়নের দাবি করা হলেও বাস্তবে ঘটেছে এর উল্টো। যারা মামলা-হামলার শিকার হননি, যারা নির্যাতিত হননি-এমন নেতাদেরও দেওয়া হয়েছে পদন্নোতি। এতে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে দলটির ভেতরে।
কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতী’ মনে করছেন। কতিপয় নেতার নিজস্ব বলয় শক্তিশালী করতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়ে এমন পুনর্গঠন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন কোনো কোনো নেতা।মোর্তুজা মাঈন ঢাকা কলেজে ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনি রাজপথে প্রতিটি প্রোগ্রাম সফল করলেও মূল্যায়ন করেনি ঢাকা কলেজে আহ্বায়ক কমিটিতে। তিনি ২০১৭ সালের ১৭ ই আগস্ট জিয়া উদ্দ্যানে জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার সময় পুলিশ তার উপর অতর্কিত গুলি চালায়, ছাত্রদল করার অপরাধে ২০১৯ সালের ৭ই জানুয়ারী গুলশান থানায় পুলিশ তাকে আটক করে।
মোর্তুজা মাঈন বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি ২০১০ সাল থেকে বাড্ডার স্থানীয় রাজনীতির সাথে জড়িত হই। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ঢাকা কলেজ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ছাত্রদলের সকল আন্দোলন সংগ্রামে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অংশগ্রহণ করি। ২০১৮ সালের নির্বাচন পরবর্তী ২০১৯ এর জানুয়ারীর ৭ তারিখ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাকে গুলশান পুলিশ প্লাজার সামনে থেকে ধরে পুলিশের কাছে তুলে দেয়। পরবর্তীতে আমাকে গুলশান থানায় নিয়ে গিয়ে আমার ফোন কেড়ে নেয়া হয় এবং ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। পুলিশ আমার ফোনে থাকা রাজনৈতিক ছবি গুলো দিয়ে আমাকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি এবং হুমকি দিতে থাকে। টানা দুই দিন আমাকে থানার লকাপে রেখে অমানবিক অত্যাচার নির্যাতন করে। উক্ত সময়ে আমার অনার্সের পরীক্ষা চলমান থাকায় তারা ৫০,০০০ টাকা এবং মুচলেকার বিনিময়ে আমার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
২০২১ সালের ১৭ই আগস্ট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় পুলিশ লীগ অতর্কিতভাবে গুলি চালায়। সেখানে আমি গুলিবিদ্ধ হই এবং মারাত্মকভাবে আহত হই। পরে সাথে সাথে আমাকে কাকরাইল মোড়ের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু সে সময়ে আওয়ামী পুলিশ লীগ প্রত্যেকটা হাসপাতালে তল্লাশি চালাচ্ছিলো, এজন্য সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ড্যাব এর ডাঃ আমানুল্লাহ আমান ভাইয়ের তত্বাবধানে মেডিএইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। পরবর্তীতে বাংলাদেশ মেডিকেল থেকে অপারেশনের মাধ্যমে কিছু বুলেট বের করা হয়। বাকি বুলেটগুলো আর বের করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে শরীরের ভিতরে এখনো সেই গুলি বহন করে চলছি এবং নিঃস্বার্থভাবে রাজনীতি করে যাচ্ছি। ২৮ অক্টোবরের ভয়াল সেই দিনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করি।
জুলাই আগস্ট আন্দোলনে পুলিশ লীগ ও ছাত্রলীগের গুলির সম্মুখে দাঁড়িয়ে সরাসরি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। যেসকল ব্যক্তি কারা নির্যাতন ও মামলা-হামলার শিকার এবং রাজনৈতিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, ঢাকা কলেজের ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটিতে তাদেরকে মূল্যায়ন করা হয়নি। দলের জন্য জেল জুলুম মামলা খেয়ে, জীবনের সোনালি সময় বিসর্জন দিয়ে আজ চূড়ান্ত অপমান হতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, দলের সহ-সভাপতি পিয়াল হাসানকে আহ্বায়ক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং মিল্লাদ হোসেনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে সদস্য সচিব করে ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দেওয়া হয়েছে।
সকালের ডাক/তারু/সোহো/এখলাছ উদ্দিন
Leave a Reply