সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় চবির স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান উপাচার্য প্রফেসর ড. ইয়াহিয়া আক্তার। এরপর সকাল ১১.৩০ টায় সমাজবিজ্ঞান মিলনায়তনে ‘বর্তমান বাংলাদেশে বিজয় দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য ইয়াহিয়া আক্তার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিব দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। শেখ হাসিনা ২০০৯-২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশে ফ্যাসিবাদ তৈরি করেছিল। মুজিব সরকার এবং হাসিনা সরকার উভয়ই দুর্নীতির কারণে দেশ ছাড়া হয়েছে। যার ফলে ১৯৭৫ এর ৫ আগস্ট মুজিবের নেতৃত্বের চূড়ান্ত পতন হয় এবং ২০২৪ এর আগষ্টে হাসিনার পতন হয়।
তিনি বলেন,সবাই বলে আমরা বাঙালীরা যুদ্ধ করেছি। কিন্তু আমরা বাঙালী না আমরা বাংলাদেশী। কারণ যদি আমরা বাঙালী বলি তাহলে শুধু বাংলা ভাষার মানুষকে বুঝাবে।যেখানে কলকাতার বাঙালিরাও চলে আসবে যারা যুদ্ধ করেনি। কিন্তু মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক নৃগোষ্ঠীও যুদ্ধ করেছে তারাও বাংলাদেশী। তাই এটাকে ভাষা দিয়ে বিচার করা যাবে না। এলাকা দিয়ে করতে হবে।
উপ- উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ শামীম উদ্দীন খান বলেন, দেশ স্বাধীন করেছে বাংলাদেশের মানুষ। ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে কেন ভারতের আরোরার কাছে নিয়াজি আত্মসমর্পণ করছে। কেন সেখানে জেনারেল ওসমানীকে রাখা হয়নি। এটা সবসময়ই প্রশ্ন থেকে যায়। এখন স্বাধীনতা আন্দোলনের যত ইতিহাস রচিত হয়েছে ওসমানীর নাম খুঁজে পাওয়া যায় না। কেন তার নাম কোথাও নেই এট আমাদের বের করতে হবে। আমি প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে চাই প্রকৃত মুক্তি যোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। যারা রাজকার ছিল তাদেরও তালিকা করতে হবে। আমরা দেখি রাজনৈতিক দল পরিবর্তনের সাথে সাথে মুক্তি যোদ্ধাদের তালিকাও পরিবর্তন হয়। আমার প্রশ্ন প্রতিদিন কি নতুন মুক্তি যোদ্ধা জন্ম নেয়? এর একটা স্হায়ী সমাধান প্রয়োজন।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন বলেন, যারা মুক্তি যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তারা জানতেন না আজকে এরকম একটি বাংলাদেশ বিনির্মান হবে ঠিক তেমনি জুলাই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে তারা জানত না বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি হবে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে যত বড় বড় আন্দোলন হয়েছে সেই আন্দোলনে কোন সিভিল সোসাইটির মানুষ আমরা পাইনি, আমরা পেয়েছি আমাদের ছাত্রদের। তারাই সকল আন্দোলন সফল করেছে। স্বাধীনতার পর সবার প্রথমে আঘাত করা হয়েছিল এদেশের ইতিহাসের উপর। এমন এক ইতিহাস তৈরি হলো যেখান থেকে বাংলাদেশের ঘোষককে হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই ইতিহাসের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে একটি দলীয় রাজনীতির অংশ করা হয়েছিল।
প্রক্টর প্রফেসর ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ এর সঞ্চালনায় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন। এছাড়াও সভায় উপস্হিত ছিলেন বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। সভায় বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শহীদদের আত্মত্যাগ এবং স্বাধীনতা অর্জনের গৌরবগাঁথা তুলে ধরেন।
সকালের ডাক/তারু/সোহো/চবি প্রতিনিধি
Leave a Reply