বাংলাদেশের ইতিহাসে ২৪-এর জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাস। এই সময়ে বাংলাদেশের নতুন করে জন্ম হয়েছে। যে জন্মের সাক্ষী এ দেশের কোটি কোটি মানুষ। এই গণঅভ্যুত্থানের ছবিগুলো তাদের হৃদয়ে স্মৃতি তথা ইতিহাস হয়ে থাকবে সারাজীবন। বিভিন্ন সংবাদকর্মী ও ফটো সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষের আলোকচিত্র ও ভিডিওতে বহন করবে জুলাই-আগস্টের উত্তাল সময়গুলো। ইতিহাস বহন করা ছবিগুলো নিয়ে তেমনি এক স্মরণীয় ছবি প্রদর্শনী শুরু হয়েছে রাজধানীতে।
সোমবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে কাজ করা বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ জার্নালিস্টস ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া (বিজেআইএম) কর্তৃক ঢাকাস্থ ইএমকে সেন্টারে ‘বাংলাদেশ পুনর্জন্ম: ৩৬ জুলাইয়ের পথে’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়।
বিজেআইএমের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ প্রদর্শনীর বিষয়বস্তু হচ্ছে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বাংলাদেশের ছাত্রজনতার বিপ্লব, যার ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের পতন।
মুক্তাদির রশীদ রোমিওর সঞ্চালনায় ছবি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনীর একমাত্র সন্তান মাহির সারওয়ার মেঘ।
মাহির সারওয়ার মেঘ বলেন, ‘আমি আমার মা-বাবা হত্যার বিচার চাই। শুধু সাংবাদিকতা করার কারণে আমি তাদেরকে হারিয়েছি। নতুন বাংলাদেশে আমি আমার মা-বাবা হত্যার বিচার চাই।’
অনুষ্ঠানে বিজেআইএমের আহ্বায়ক স্যাম জাহান বলেন, ‘ন্যায়, নীতি, সত্য ও সাহসের পথে যতদিন সাংবাদিকতা থাকবে, সাংবাদিকরা থাকবেন; ততদিন আর কোনো দৈত্যদানো এই জাতির ঘাড়ের ওপর চড়ে বসতে পারবে না।’
অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্টের শহীদদের সম্মানে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান কাভার করা সাংবাদিক জীবন আহমেদ, শরীফ খিয়াম আহমেদ, ইয়ামিন সাজিদ, সাইফ হাসনাত ও মুহাম্মদ আলী মাজেদ সে সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তা, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক উপস্থিত ছিলেন।
প্রদর্শনীর সব অংশগ্রহণকারী পেশাদার আলোকচিত্রী না হলেও এর মাধ্যমে সংগঠনটির সদস্য যারা সম্মুখে থেকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব নিয়ে প্রতিবেদন বা কাজ করেছেন, তারা কিভাবে ঘটনাপ্রবাহগুলো দেখেছেন ও উপস্থাপন করেছেন তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এ ছাড়া এই অভ্যুত্থানে মুক্ত সাংবাদিকতার কী অবদান ছিল সেই ভাবনার খোরাকও প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে।
প্রখ্যাত আলোকচিত্রী এবং বিজেআইএম সদস্য কে এম আসাদ ছবি প্রদর্শনীর কিউরেশান করেছেন। প্রদর্শনীটি আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। তবে ৬ ও ১১ ডিসেম্বর অনিবার্য কারণবশত তা বন্ধ থাকবে বলে আয়োজকদের তরফ থেকে জানানো হয়।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা ও বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সব ধরনের নৈতিক সমর্থন দিতে ২০২২ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ জার্নালিস্টস ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া (বিজেআইএম) প্রতিষ্ঠিত হয়। বিগত সময়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা বিশেষত সীমাবদ্ধ সংবাদ আইন ও সেন্সরশিপের সময়ে বিজেআইএম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছে।
সকালের ডাক/তারু/অমিত বণিক
Leave a Reply