নিজস্ব প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: গতকাল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার একটি সাংবাদিক পরিবারের উপর সংঘটিত ভয়াবহ হামলার ঘটনা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের মদদে সংঘটিত এই হামলায় বাড়িঘর ভাঙচুর ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘন, স্থানীয় দুর্নীতি ও বিচার বহির্ভূত হত্যার বিষয়ে সরব ছিলেন। পরিবারের সদস্য মোঃ আনহার আলী একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী। তার ছেলে আরাফাত মাহমুদ তপু একাধিকবার রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তিনি বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
পরিবারের অভিযোগ, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আনহার আলীর বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়, যার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছিল। এই মামলায় তপুকেও যুক্ত করা হয়, যদিও তিনি সেই সময়ে বিদেশে অবস্থান করছিলেন এবং শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছিলেন।
এমন অবস্থায় গত ২৭ জুলাই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা গোলাম কিবরিয়া শফি এবং মুহিত এর নেতৃত্বে প্রায় বিশজনের একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী দল আনহার আলীর বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা লাঠি, ধারালো অস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল। তারা বাড়ির দরজা-জানালা, আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং “দেশদ্রোহী”আখ্যা দিয়ে প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
এ সময় আনহার আলী ও তার আরেক ছেলে আজহার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। প্রতিবেশীরা খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে, কিন্তু হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করে উল্টো আনহার আলীকে “সুরক্ষার জন্য”থানায় নিয়ে যায়। পরে জানা যায়, তাকে পূর্বের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং অতিরিক্তভাবে পুলিশের উপর হামলা, ভাঙচুরসহ নতুন কিছু বানোয়াট অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। বরং, ভুক্তভোগীর পরিবার বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি পরিবারের ওপর হামলা নয়—এটি বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় বিরোধী মত ও স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে চলমান দমন-পীড়নের একটি প্রতিচ্ছবি। এক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা আইন ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে।
Leave a Reply