স্টাফ রিপোর্টার: এ মাসের শুরুর দিকে মানিকগঞ্জে এক যুবক এনজিও স্বেচ্ছাসেবকের উপর নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ভীতি এবং ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে কাজ করার জন্য পরিচিত সানজিদ আহমেদ ইমন তার নিজের বাড়িতেই ছুরিকাঘাতের শিকার হন। অভিযোগ অনুযায়ী, ছাত্রলীগের ক্যাডার সাব্বির এবং মনিরুল হক মীম এই হামলা চালিয়েছেন, যা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় সংগঠিত হয়েছিল।
হামলাটি ঘটে এক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময়, যা এলাকায় একটি সাধারণ ঘটনা। অন্ধকার পরিস্থিতি হামলাকারীদের জন্য এক চমৎকার সুযোগ তৈরি করে। ইমন যখন তার বাবা-মায়ের সাথে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন এই সশস্ত্র আক্রমণ চালানো হয়।
হামলাকারীরা ধারালো ছুরি নিয়ে উপস্থিত হয় এবং তাদের আচরণ ছিল নৃশংস। ইমন আত্মরক্ষার জন্য তার মাথা ঢাকতে হাত উঁচু করে চেষ্টা করেন, কিন্তু হামলাকারীরা কোনো দয়া প্রদর্শন করেনি। তাদের মধ্যে একজন ছুরি দিয়ে আঘাত করে ইমনের বাম হাতকে মারাত্মকভাবে আহত করে। পুরো ঘটনায় তার বাবা-মা আতঙ্কিত অবস্থায় সাহায্যের জন্য চিৎকার করেন এবং তাদের ছেলেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন।
এই হামলার পর, ইমন শারীরিক এবং মানসিকভাবে গভীর ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তার চিকিৎসা করা হয়। তার বাম হাত গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা তাকে একটি স্থায়ী আঘাতের স্মৃতি বহন করতে বাধ্য করছে।
“আমি কখনো ভাবিনি যে নিজের বাড়িতে আমি এই ধরনের আক্রমণের শিকার হব,” বলেন ইমন, যিনি এখনও এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে সেরে উঠছেন। “আমি বেঁচে থাকার জন্য কৃতজ্ঞ, কিন্তু যা ঘটতে পারত তার ভয় আমাকে এবং আমার পরিবারকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।”
ঘটনাটি গুরুতর হলেও পুলিশের ভূমিকা খুবই হতাশাজনক। পরিবারটি এই হামলার বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করলেও, পুলিশ হাসপাতাল পরিদর্শন করেনি বা ইমনের বিবৃতি নেওয়ার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এই প্রতিক্রিয়ার অভাব স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং তাদের স্পষ্ট নিষ্ক্রিয়তা প্রকাশ করেছে।
এইচআইভি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে কাজ করা এনজিওর একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ইমন দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে কথা বলে আসছেন। অনেকে মনে করেন তার এই কাজ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তিনি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন।
তার এনজিও সহকর্মীরা হাসপাতালে তাকে দেখতে গেছেন এবং তাদের সংহতি প্রকাশ করেছেন। “এটি মেনে নেওয়া যায় না যে, আমাদের সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করা একজন ব্যক্তি এই ধরনের সহিংসতার শিকার হবেন এবং কর্তৃপক্ষ তাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হবে,” বলেন তার এক সহকর্মী।
এই ঘটনাটি স্থানীয় বাসিন্দা এবং কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তারা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছেন এবং কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছেন। এমন একটি গুরুতর ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে দেখায় যে, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আইন প্রয়োগকারীদের কার্যক্রমে কতটা প্রভাব ফেলে।
ইমন তার সেরে ওঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে তার পরিবারের জন্য ভয় এবং মানসিক আঘাত এখনও স্পষ্ট। তারা হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার এবং তাদের সুরক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এই হামলা বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে কাজ করা ব্যক্তিদের মুখোমুখি হওয়া বিপদ এবং চ্যালেঞ্জের একটি গুরুতর উদাহরণ। এটি দেশটির আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে জবাবদিহিতা এবং দুর্নীতি দূরীকরণের জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে।
Leave a Reply